দূর্গা পূজা

                           দূর্গা পূজা

দূর্গা পূজা

                 বাঙালীর সেরা দূর্গা পূজা

 দূর্গা পূজা বাঙালীর সেরা পূজা বাংলা ও বাঙালীকে জড়িয়ে আছে, বাঙালীর সেরা দূর্গা পূজা। বারো মাসের তেরো পার্বণের মধ্যে সেরা পার্বণ হল দূর্গা পূজা, বা শারদোৎসব । প্রত্যেক বছরের মতন গ্রীষ্মের প্রখরতা কাটিয়ে এবং শিউলী ফুলের ঝরণা ধারায়, এবং শিশিরে ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে একটি আভাস ছুটে এসে বলে যায়, মা আসছে বাংলার ঘরে, সমস্ত বাঙালীর অন্তরে বেজে ওঠে সেরা পার্বণের ঢঙ্কা। এই ঢঙ্কা শুধু বাঙালীকে আনন্দিত করে না, সমস্ত মানব জাতিকেই আনন্দে খুশিতে ভরিয়ে দিয়ে যায়। এই  দূর্গা পূজা সকলকেই ভালোবাসার মেল বন্ধনে বেঁধে রাখে। সকলের মধ্যে এক নতুনত্য সেজে ওঠে, বেড়ে ওঠে মায়ের প্রতি সমস্ত মানব সন্তানের স্নেহ, মমতা। পূরাণের কথায় রাম চন্দ্র রাবনকে হত্যা করার জন্য মা দূর্গাকে অর্থাৎ শরৎ কালে স্মরণ করে তাঁকে ভক্তিভরে দূর্গা পূজো করে তাঁকে মুগ্ধ করে তুলেছিলেন। এবং মা দূর্গার মুগ্ধতার ফলে, যে বর রামচন্দ্র মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন, সেই মাতৃ বরের দ্বারাই রামচন্দ্র রাবনকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করে এনেছিলেন। দূর্গা অর্থাৎ মহাদেবের স্ত্রী, যাদেরকে আমরা শিব গৌরি বলে সকলে জানি। সমস্ত দেবতাদের মধ্যে যিনি মহান, তিনি হলেন মহাদেব অর্থাৎ শিব। শ্রী রামচন্দ্রের কালে রাক্ষস বংশ ছিল সবথেকে শক্তিশালি। আর সেই রাক্ষসদের রাজা ছিলেন রাবণ, রাবন  ছিলেন মহাদেবের ভক্ত, তিনি বহুদিন ধ্যানে বসে যজ্ঞ করে মহাদেবের স্মরনাপন্য হন। এবং মহাদেব রাবনের প্রতি তুষ্ট হয়ে রাবনকে বর দেবার আর্জি জানান, আর ঐ সময় সুবিধাবাদি  রাবণ মহাদেবের কাছ থেকে অমরত্বের বর চেয়ে বসে। মহাদেব সেরা ভক্তের চাওয়াকে কখনোই অবজ্ঞা করতে পারেন না। এই বিশ্ব বোহ্মান্ডে যেমন সৃষ্টি আছে তেমনি ধংস ও আছে। অর্থাৎ যার জন্ম হবে তার বিনাশ ও একদিন হবেই। তাই মহাদেব রাবণকে বললেন, তোমাকে অমরত্বের বর দান করলাম ঠিকই কিন্তু কোন নারীর প্রতি তোমার লোভই হবে তোমার মৃত্যুর কারন।  রাবণ বললেন এ কিরকম বর দিলেন প্রভু, মুখে জল তুলে দিয়ে হাতে বিশ ধরিয়ে দিচ্ছেন তা কি পরবর্তী পিপাসায় বিশ পান করে মরতে হবে। এই অভীশাপের বিহিত আপনি বলুন প্রভু। মহাদেব বললেন এর বিহিত তোমাকেই করতে হবে, যেমন তুমি আমার পূজো করে আমাকে সন্তুষ্ট করে বর পেলে। তেমনি প্রত্যেক বছর বসন্তের শেষে দেবী দূর্গার পূজো করে তাকে সন্তুষ্ট করে তার স্মরনাপন্য হলে, তাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত বরই তোমাকে অমর করবে। কিন্তু এই বর প্রাপ্তের আগে কোন নারীর প্রতি তোমার লোভ মানেই তোমার মৃত্যু। এই বলে মহাদেব অদৃশ্য হলেন। রাবণ এই কথা শুনে আনন্দে নাচতে থাকলেন। এবং মহাদেবের কথামত প্রতি বছর বসন্তের শেষে দেবী দূর্গা পূূজার বোধণ অর্থাৎ পূজো করতে থাকেন,যা বর্তমান বাসন্তি পূজো নামে খ্যাত।  দেবী দূর্গার অনেক নামের মধ্যে মা বাসন্তি ও একটি নাম,কিন্তু রাবন যখন সীতাকে দেখেন তার রূপ সৌন্দর্যকতার মোহ রাবণকে তার অতিত ও ভবিষ্যতের সমস্ত কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তিনি তাই নিজের কঠোরতাকে সামলাতে না পেরে, সীতার মোহে পাগল হয়ে গেছিলেন। তাই সীতাকে তিনি তুলে নিয়ে গিয়ে নিজের গৃহে বন্দি করে রাখলেন, কারন মা দূর্গার শেষ পূজো সেরে মায়ের কাছ থেকে অমরত্বের বর প্রাপ্ত হলেই, সীতাকে তিনি বিয়ে করবেন। রাবণের এই সীতা হরনের কথা রামচন্দ্রের কানে গেলে, তিনি রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য রাবণের আসল শক্তি দেবী দূর্গাকে অকালে অর্থাৎ শরতকালে বোধন করেন। এবং দেবী দূর্গা তুষ্ট হয়ে রামচন্দ্রের স্মরনাপন্য হন। রামচন্দ্র দেবী দূর্গাকে রাবণের অপকর্মের কথা বলায়, দেবী দূর্গা রামচন্দ্রকে যুদ্ধ করার, এবং যুদ্ধ জয়ের বর দান করলেন। এবং এই বরের দ্বারাই রামচন্দ্র রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করে আনেন। আর  সেই থেকে দেবী দূর্গার পূজো মর্তবাসীরা করে আসছে। রামচন্দ্র ছিলেন মানব জাতির কাছে দেবতা স্বরূপ, তাই তাঁর পূজোটাকেই আমরা শ্রেষ্ঠ পূজো বা শারোদসব বলে মানি। কিন্তু আজও এই বাংলার বুকে মা দূর্গার পূজো বছরে দু বারই সমার্পন হয়। বিশেস করে আমরা শরতের পূজোটাকেই শ্রেষ্ঠ বলে মান্য করি। যে সমস্ত বাঙালীর বন্ধুরা বিদেশে থাকেন, তাঁরাও সকলেই ওই বিদেশে বাঙালীর সেরা দূর্গা পূজা পালন করেন। 

দূর্গা পূজা
 মা দূর্গা 

পুরো বাঁংলার সাথে সাথে মেতে ওঠেন বিদেশে থাকা বাজ্ঞালীরাও। পুরনো দিনের ভাষায় বলি, এসেছে শরৎ হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে। সকাল বেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা ধরে। দীর্ঘ গ্রীষ্ম আর বর্ষার পর যখন শরৎ হিমের পরশের হাওয়া নিয়ে, মুক্তোর মত শিশির ঝরিয়ে আমাদের সামনে এসে পৌঁছায়, তখনি মা দূর্গার আগমনের বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছে যায়। সকলের মন উতাল হয়ে ওঠে নতুন জামা কাপড় পরে মাকে দর্শন করবো। ভাবতে ভাবতেই মা দূর্গার আগমন হয় মর্তে, পঞ্চমি থেকে নবমি আনন্দ আলোয় ভরে ওঠে সমস্ত বাংলা। দিন রাতের কোন তফাৎ থাকেনা, থাকেনা কোন জাত ভিভেদের ভিন্নতা। মা দূর্গা তাঁর ত্রিনয়নী শক্তির দ্বারা ক্ষুদ্র বৃহৎ, উচ্চ নিচ সকলকেই দর্শনাশীস দান করেন। এবং সকলকেই নিজের সন্তান ভেবে ঢাক ঢোলের শব্দে মাতিয়ে তোলেন। আর কদিন পরেই মায়ের বিদায়ের ডাক পড়ে যায়। এবার তাঁকে মর্ত থেকে অর্থাৎ বাপের বাড়ি, এবং  শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে, তাই আমরা দশমির দিন কন্যা বিদায়ের আয়োজন করি আলতা সিন্দুর আর মিষ্টি দিয়ে তাঁকে বরণ করে ভাসিয়ে দি গজ্ঞার জলে। সমস্ত বাঙালীর মনে এক দূঃখের আভাষ ঘিরে ফেলে, যেন কোন গৃহস্হ বাড়ির একমাত্র কন্যা বিয়ের পর প্রথমবার বাপের বাড়ি এসে কদিন থেকে আবার শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে, যে অবস্তা মা, বাবা, ও সমস্ত পরিবারের হয়,ঠিক তেমনি মা দূর্গার বিসর্জনের পর সমস্ত মানব জাতির সেই অবস্হাই দেখা যায়। সকলেইতো বিজয়ার শুভেচ্ছা হাসি মুখে গ্রহন করি ঠিকই কিন্তু, সে হাসি অন্তরের হাসি নয়, অন্তর শুধু মায়ের আগমনের দিন খুঁজে বেড়ায়, আর সেই দিনটা আশলে আমরা যখন হাসি, সেটাই হল আমাদের অন্তরের হাসি। এই ভাবেই আমরা মায়ের আগমনের প্রতি বিশ্বাস রেখে কর্মে জড়িয়ে পড়ি। আর তার মধ্যেই কেটে যায় একটি বছর, আবার হাজির হয় বাঙীলীর সেরা দূর্গা পূজা । এই পার্বণের আসা যাওয়াতেই আমরা মেতে উঠি বছরের পর বছর। এই ভাবে বছরে পূজায় পূজায়  যায় আমাদের দিন, আর এসবের মধ্যে যে পূজা সব থেকে বেশি আনন্দ দেয় সেই হল বাঙালীর সেরা দূর্গা পূজা ।

                    দূর্গা পূজা, তাপস প্রধানের লেখা 

                               তাপস প্রধান

     👍    অনেক ধন্যবাদ জানাই তাপস প্রধানকে 👍

No comments:

Powered by Blogger.