ভাবমুক্তি : জীবনের কিছু বদলে দেওয়া কথা : Life History
ভাবমুক্তি |
ভাবমুক্তি : জীবনের কিছু বদলে দেওয়া কথা : Life History
আমরা সকলেই মানুষের নামে বড় হয়েছি বড় হয়ে গড়ছি নিজেকে, সমাজকে আর সভ্যতাকে। নিজেকে গড়ে তােলার জন্য প্রশ্রয় দিয়েছি মিথ্যাকে, ভন্ডামিকে, আর নিজের উড়ু উড়ু মনের সাজানাে বাকশক্তিকে। নামেই শুধু সমাজ গড়ছি। সমাজের নাম করেই গড়ে তুলছি নিজের প্রতিপত্তি, স্ট্যাটাস, আর স্বার্থ গঠনের নানান চিন্তাভাবনা।
আমাদের সভ্যতা সে তাে ফেলে আশা অতীতের হাত ধরে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে এগিয়ে চলেছে বর্তমান মিথ্যাশিত মানবতাকে নিয়ে নামেই আমরা শুধু চলমান জীব। নামকে বজায় রেখেই আমরা এগিয়ে চলেছি দিনের পর দিনকে অতিক্রম করে। আমাদের সর্বজনের সঙ্গী সমাজ সে তাে অনেক দূরেই থেকে গেছে। বারবার চিৎকার করে বলছে আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তােমাদের ভাবী জীবনের স্বপ্ন গড়ার পথিক।
আমরা তার কথা শুনেও তাকে হেয় করে ছুটছি যৌবন আর অর্থ লালসার পিছনে, বর্তমান আমরা যৌবনের সময়টাকে উপচ্ছে, ওটা নদীর ন্যায় বইয়ে দিতে চাইছি। এই জল মাটির শুষ্কতা পূর্ণ করলেও জল পূর্ণ পাত্রটির জল ভাগ অনেকটাই শুন্য হয়ে যায়।
পৃথিবীতে জীবন মানেই যৌবন কালের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বর্তমান যৌবনের কোন কালই খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ অতীতের চেয়ে আমরা অনেক শিখিত হয়েছি। জ্ঞান হবার সঙ্গে সঙ্গেই নারী পুরুষের সম্পর্কটাকে বুঝে নিচ্ছি। সঙ্গ দোষে, সিনেমা, থিয়েটারে এবং উভয়েরই চলন বলনে। আজকের মতন অতীতের সময় থেকেই চলে আসছে নারী পুরুষের ভালােবাসা ও মধুর সম্পর্ক। তার সকলেই সন্তানের মা, বাবা হয়েছে। দুঃখ কষ্টের সঙ্গে লড়াই করে তিলে তিলে বাঁচিয়ে রেখেছেন সত্যের প্রাণ বিন্দুটি।
তাদের গঠনকেই অবলম্বন করে দাঁড়িয়ে আছি আমরা বর্তমান শিক্ষিত সমাজ। শিক্ষার প্রাচুর্যতা আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও আমরা জড়িয়ে পড়েছি লােভনীয় মিথ্যার জালে, যে জাল আমাদেরই তৈরী আজ সেই জালকেই আমরা শরীর থেকে আলাদা করতে পারছি না কারণ আমরা অভিমুন্যর মতন গঠনটাকে ভালােভাবে জেনে বুঝে নিয়েছি কিন্তু বিপদকালে তার ভাঞ্জনটাকে মন থেকে বুঝে নিতে পারিনি। তাই আমরা মানব শ্রেষ্ঠ হয়েও সব দিক থেকে হেয় হয়ে পড়েছি। অর্থ, সম্পদ, প্রাচুর্য, এই সৰকে যতই আমরা আত্ম জীবনের সর্বেসর্বা মনে করি না কেন।
মৃত্যুর কাছে এর কোন মূল্যই নেই। যে বস্ত্রহীন দেহে মাটির বুকে জন্মগ্রহণ করে। সমগ্র পৃথিবীটাকে নিজের নিজের বলে চিৎকার করি। একদিন নিজের সমস্ত, আশা, স্বপ্ন, ধন দৌলত সবকিছুকে ফেলে বস্ত্রহীন দেহে মাটিতেই মিশে যেতে হয়। তাই বলি “মৃত্যু জীবনের এক অবাক বিস্ময়, ডাকিলে সে তােমারে কেহ সঙ্গী নাহি রয়। আপন মর্মের বন্ধু যে জন, সেদিন সেও ছােটে প্রাণ পন।
যাদের ভালােবাসায় আমাদের স্পন্দনটি প্রস্ফুটিত হল এই আলাের জগতে।
যারা স্বপ্ন আশাকে ভরসা করে দুঃখ কষ্ট এবং কতক লাঞ্ছনা সয়ে বড় করে তুলল আমাদের অর্থাৎ এই যুব সমাজকে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল জীবনের চলার পথকে সাজিয়ে দিল আমাদের স্বপ্ন। আর আমরা তাদের জন্য কি করলাম? যা করার নয় তাই করছি, তাদের যখন কোন অবলম্বনের প্রয়ােজন, তখন আমরা তাদের কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছি দু’বেলা আহারের জন্য তাদেরকে কতই না মর্যাদাহানি করছি।
যারা আমাদের বিশ্বাস গড়ল তাদেরকে আমরা অবিশাস করছি। বর্তমান সন্তান হয়ে আমরা মা বাবাকে বহন অসাধ্য বােঝা মনে করে
ফেলে দিচ্ছি, মাটিতে তাই কবিতার ভাষায় বলি
“জানি সব তবু করি ভুল, সেদিন আসবে ঘুরে,
আজ সাহেবি ছেলের অভাগা পিতামাতা, মরছে যে অনাহারে, আমরা যেদিন আসব হেথা, বুঝব সেদিন তাদের ব্যথা। থাকবে না আর কোন কুল, জানি সব তবু করি ভুল।”
কিন্তু কেন বর্তমান সমাজের এমন চিহ্ন? যারা দিন রাতের হিসাব না করে আমাদের বােঝা দীর্ঘদিন বহন করে এসেছেন আজ তাদের অল্প সময়ের বােঝা বহন করতে গিয়ে নিজের ভাবসামটিাই হারিয়ে ফেলছি। আমরা যৌবন আর অর্থ লালসার মােহে, নিজের জন্ম লাভের মার্টিকেই পাথর দিয়ে ঢেকে ফেলেছি, রক্ত সম্পর্কের সব কিছুকেই ব্যবসার হিসার তালিকার সঙ্গে যুক্ত করে। হিংসা আর মিথ্যা দিয়ে তাকে বাজারে বিক্রি করে ফেলেছি আমরা শিক্ষিত হয়েও কেউই বুঝতে পারছি না। মিথ্যা এবং হিংসা দিয়ে রক্তের সম্পর্কটাকে ধরে রাখা যায় না।
সম্পর্ক রাখতে হলে ভালােবাসা, বিশ্বাস এবং আন্তরিণ দয়ামায়ার প্রয়ােজন। পূণর্মিমান পৃথিবীতে সবকিছুর মতন আমরাও যখন ঘুরে আসব জীবনের শেষ সময়ে। তখন অতীতটাকে মর্মের বােধশক্তি দিয়ে বুঝতে পারব। তিলে গ্রহণ করতে হচ্ছে।
তাই আমাদের মনে রাখা উচিত জীবনে চলতে গেলে তিলে ভাবব না বুঝে যে গাছ, আমরা পুতে এসেছিলাম সেই গাছেরই ফল আজ সময়, বিবেক এবং ভাবনা এই তিনাকে সঙ্গে রেখে এগােতে থাকলে জীবনের শেষ সময় প্রচণ্ড কেউ না কেউ নিশ্চয় আমাদের অবলম্বন হয়ে থাকবে। তাই বলি “জশাহ দুয়ারে দাও খুলি সেই স্বার, মৃত্যুর পরেও মরিবে তােমারে বার বার আত্মা ও জ্ঞানের ভান্ডার দিয়া।
দাও কিছু অনােরে দান করিয়া।"
এবং আমারা যতই দুর্বল কিংবা আমরা যতই দুর্বল দুর্বল কিংবা অর্থহীনা হয়ে পড়ি না কেন কোন পরিস্থিতিতেই নিজের ভাবনাকে কারাের কাছে বিক্রি করে দেওয়া উচিত নয়। আমাদের প্রত্যেকের ভাবনা প্রত্যেকের কাছে অন্ধকার পথের একবিন্দু আলাের শিখার ন্যায় উজ্জ্বল। একের পর একের কাছে নিজের ভাবনাকে বিক্রি করায় চেয়ে নিজের কোন কাজে লাগলে সেই কাজই সমাজের কাছে এক মহৎ ব্যক্তিত্যের কাজ হয়।
আজ ও আমরা নিজেকে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী এবং শিক্ষিত বলে মনে করি সাজানাে সমাজের বহি্জগতের কাছে কিন্তু ভেতর জগতে আমাদের মধ্যে কোন কিছুই নেই। তাইতাে মাতৃপিতৃ স্নেহ মমতাকে হারিয়ে ভ্রাতৃত্বকে স্বার্থ দিয়ে ঢেকে ফেলেছি আমরা এই শিক্ষিত সমাজ। এই হলাম আমরা বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন জীব।
........................ Life History.......................
No comments: